রূপ চর্চায়ও আদার অনেক কদর যেনে নিন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আদা মশলাযুক্ত প্রায় সব রান্নাতেই লাগে এবং সারা বছরই পাওয়া যায়। তবে কেবল রান্নার অনুষঙ্গ নয়, এর ওষুধি গুণও সবার জানা। কেউ কেউ তো আদা ছাড়া চা কল্পনাও করতে পারেন না। কাশির জন্যও আদা অনেক উপকারি। এছাড়া, এটি শারীরিক সুস্থতা ও সৌন্দর্যচর্চার ক্ষেত্রেও বহুল ব্যবহৃত একটি অসাধারণ প্রাকৃতিক উপাদান। এখন জেনে নিন সৌন্দর্যচর্চার ক্ষেত্রে আদার চমকপ্রদ কিছু গুণের কথা।

প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে

অনেক সময় ত্বকের উপরিভাগে লালচে দাগ, ফুলে যাওয়া, চুলকানির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়ে থাকে। বিভিন্ন কারণেই ত্বকের এমন প্রদাহের সমস্যা দেখা দিতে পার। Fruitive-এর নিউট্রিশনাল কনসাল্টেন্ট জেনিফার ভ্যান হর্ণ জানান, “প্রদাহ হলো শরীরের স্ব-রক্ষার অন্যতম একটি ফাংশন। যা অতিরিক্ত হয়ে গেলে শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে।” তিনি আরো জানান, এক্ষেত্রে আদা খুব উপকারী ও দ্রুত কাজ করে থাকে। কারণ আদাতে রয়েছে প্রদাহ-বিরোধী ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান সমূহ। যা ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে থাকে।

মেদ কমাতে সাহায্য করে

আদা হলো ‘মেটাবলিজম বুষ্টার’, যা শরীরের ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে থাকে। ‘হিউম্যান নিউট্রিশন অ্যাট কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি’ থেকে সংগঠিত হওয়া এক গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, আদা ক্ষিদেভাব কমাতে এবং পেট ভরাভাব তৈরি করতে সাহায্য করে থাকে। যার কারণে, আদাযুক্ত চা অথবা আদা-চা পানের ফলে ক্ষিদেভাব কমে যায়। এতে করে খাওয়া কম হয় অনেকখানি।

চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে

আয়ুর্বেদিক স্কিনকেয়ার সেন্টার ‘আরিয়া এসেনশিয়াল’ এর প্রতিষ্ঠাতা শাধো পূন্যপূজা জানান, “যদি পাতলা চুল ও মাথার ত্বকে টাকভাব এর সমস্যা দেখা দেয়, তবে আদা ব্যবহার করা শুরু করতে হবে। আদা চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগাতে, শক্ত করতে এবং চুল পড়ার হার কমিয়ে আনে অনেকখানি।” তিনি আরো জানান, প্রতি সপ্তাহে তিনি সুস্থ চুলের জন্য আদা ব্যবহার করেন। চুলের যত্নে আদা ব্যবহারের নিয়ম- এক টেবিল চামচ তাজা আদার রসের সাথে আধা কাপ পরিমাণ নারিকেল তেল মিশিয়ে চুলের গোঁড়ায় খুব ভালোভাবে ম্যাসাজ করে লাগাতে হবে। আধাঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা সময় পর্যন্ত রেখে দিয়ে এরপর চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।

চেহারায় বয়সের ছাপ পড়া প্রতিহত করতে কাজ করে

শাধো পূন্যপূজা বলেন, “আয়ুর্বেদিক ও চায়নিজ মেডিসিনের ক্ষেত্রে হাজার হাজার বছর ধরেই আদা অ্যান্টি-এইজিং উপাদান হিসেবে বহুল ব্যবহৃত উপাদান হিসেবে পরিচিত। আদাতে থাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমূহ কোলাজেন উৎপাদনের হার বৃদ্ধি করে, ত্বকের ক্ষয় কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে আনে। এছাড়াও আদা হাইপারপিগমেন্টেশন (ত্বকের কালোভাব) এর মাত্রা কমিয়ে আনতে কাজ করে।”

ব্রণের প্রাদুর্ভাব কমায় আদা

প্রাকৃতিক উপাদান আদাতে থাকা অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান সমূহ ত্বকে ব্রণ তৈরি কারণ- ব্যাকটেরিয়া ও ফ্রি রেডিক্যালের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। যার ফলে আদা ব্রণ ও ব্রণের প্রাদুর্ভাব কমাতে খুব চমৎকার কাজ করে। বেয়ার অ্যালকেমির ফেসিয়ালিষ্ট মেডিনা তশিবেম্বা জানান, “আদা ত্বকের লালচে দাগ দূর করতে ও নতুন কোষ তৈরি করতে কাজ করে।” তিনি আদা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বলেন, ত্বকের অথবা নিজের পছন্দনীয় যেকোন ফেসপ্যাকে কিছু পরিমাণ আদার রস যোগ করে নিয়ে ব্যবহার করলেই উপকার পাওয়া যাবে।

খুশকির সমস্যা দূর করে

মাথার ত্বকে খুশকির সমস্যা দেখা দেয় মরা চামড়ার ফলে। শীতকালে মূলত মাথার ত্বকে খুশকির সমস্যা দেখা দেয় বেশি। আদার প্রদাহ-বিরোধী ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদানের কারণে তেলের সাথে আদার রস মিশিয়ে মাথার ত্বকে ভালোভাবে ব্যবহার করলে খুশকির সমস্যা কমে যায় অনেকখানি।

কাটাছেঁড়া সারাতে আদা

বিশেষজ্ঞদের মতে, “আদাতে থাকা অ্যান্টিস্যাপটিক উপাদান শরীরের যেকোন অংশের কাটা-ছেড়া যাওয়ার ক্ষেত্রে খুব দ্রুত কাজ করে থাকে। আদা প্রয়োগের ফলে কাটা অংশে কোন রকম ইনফেকশন তৈরি হয় না এবং দ্রুত নতুন কোষ তৈরির কাজ শুরু হয়ে থাকে।” কোথাও কেটে গেলে কাটা অংশের উপরে তাজা আদা দিয়ে হালকাভাবে ঘষতে হবে। এছাড়াও তিনি আর বলেন, প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে আদা নিয়মিত রাখলে শারীরিক সুস্থতা বজায় থাকে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর